মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে ‘ভুয়া’ পরিচয় দিয়ে মিঞা আরেফী নামের যে ব্যক্তি বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তিনি ‘ইসরায়েলের এজেন্ট’ বলে ধারণা তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের।
সচিবালয়ে রোববার এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “গতকাল (শনিবার) তারা একজন ব্যক্তিকে ধরে এনে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে তাকে দিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে দিয়েছে, কথা বলেছে। পাশে আবার তাদের বড় বড় নেতারা বসেছিল।
“মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে, সে সরকারের কেউ নয় এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও বলেছেন এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কিন্তু এখানে স্পষ্টত বিএনপি একটি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের কাছে যে খবর আছে, সেই ব্যক্তিটি হচ্ছে ইসরায়েলের একজন এজেন্ট, এটি বিভিন্ন সূত্র বলছে। ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কিছু বলেনি। এজন্য ইসরায়েল বিএনপির উপর সন্তুষ্ট। অনেকে বলছে, একজন ইসরায়েলি এজেন্টকে তারা পাঠিয়েছে, যাকে নিয়ে কালকে তারা সভা করেছে।”
শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন মিঞা আরেফী নামের ওই ব্যক্তি। তিনি নিজের পরিচয় দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে।
কিন্তু পরে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওতে দেখা যায়, মিঞা আরেফী ইংরেজিতে বক্তব্য দিচ্ছেন, তার হাতের ডানদিকে বসে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইশরাক হোসেন।
আরেফী দাবি করেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ‘হামলার’ কঠোর ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র, ৩ নভেম্বরের পর আওয়ামী লীগ আর ‘ক্ষমতায় থাকতে পারবে না’।
যুক্তরাষ্ট্র এবার পুলিশ ও আনসারসহ বিভন্ন বাহিনীর ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কোনো প্রতিনিধি নয়াপল্টনে গিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলি বলেন, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে কারও যাওয়ার তথ্য পুরোপুরি ‘মিথ্যা’।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যে ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন, তার সম্পর্কে বিএনপির কাছে কোনো তথ্য নেই।
“বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দিয়ে যিনি সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রেখেছেন, তা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দৃষ্টি গোচরে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়ে বিএনপি একেবারেই অবগত নয় এবং এই ব্যক্তির বিষয়ে দূতাবাস থেকে কোনো রকম পূর্বধারণা মহাসচিবকে অবহিত করা হয়নি বিধায় তার বক্তব্যের কোনো দায়িত্ব বিএনপি বহন করে না।”
বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া ওই ব্যক্তি কীভাবে বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
ওই ব্যক্তি পররাষ্ট্র নীতি-নৈতিকতা কতখানি লংঘন করেছেন, সেই প্রশ্ন তুলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি দেখছে।
আর তথ্যমন্ত্রী বলেন, যারা ‘পুলিশ মেরেছে এবং প্রধান বিচারপতির বাড়ি, বিচারপতিদের কমপ্লেক্স এবং হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে’, তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে বলে তিনি আশা করছেন।
বিএনপির সমাবেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, “কোনো দলের পক্ষ হয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে যায়নি, তারা সেখানে সংবাদ সংগ্রহে গেছেন। তাদের ওপর কেন হামলা হল? গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। আমি এগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এটির বিচার হবে।
“সরকার বিএনপি এবং জামায়াতকে সমাবেশ করার বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তারা সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা চালায় এবং পুলিশ বক্সের উপর হামলা চালায়, পুলিশ বক্স জ্বালিয়ে দেয়। সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হচ্ছে তারা পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে।”
কোনো রাজনৈতিক দল এভাবে বর্বরতা করতে পারে না মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “এর দায় শুধু যারা করেছে তাদের নয়, দায় নির্দেশদাতাদের। কারণ তারা এই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল।
“তারা বোমা নিক্ষেপ করেছে, পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করেছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। যদি সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় না দিত তাহলে শতাধিক পুলিশ আনসার সদস্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আহত হত না। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বিধায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আহত হয়নি।