আজ এক গ্রুপে একটা মেয়ের কাহিনী পড়ে মনে হলো, বিপদের সময় যদি পরিবার আশ্রয়ই না হতে পারবে, উল্টো পরিবারের কথা ভেবে যদি আমাদের গভীর থেকে গভীরতর খাদেই পড়ে যেতে হবে, তবে ঐ পরিবার নিয়ে আমি করবোটা কী?
এই মেয়েটাকে বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ব্ল্যাকমেইল করে, ছবি এডিট করে, জোর করে সম্পর্ক রাখতে বাধ্য করে। বাট মেয়েটা পরিবার এমনকি থানায় যাইতে পারে না সম্মানের ভয়ে। লিটারেলি পরিবারের সম্মান বাঁচানোর জন্য মেয়েটা মৃত্যুর যন্ত্রনা বরণ করে নিয়েছে। অথচ সে একটাবারের জন্য কথাগুলো শেয়ার করতে পারছে না। বাবার সাথে না, মায়ের সাথে না, ভাইয়ের সাথেও না।
যৌতুক কেস বলেন, স্বামীর মার খেয়ে মরে যাওয়া বলেন আর পরীক্ষায় ফেইল করে ঝুলে পড়া বলেন, প্রতিটা ক্ষয়েই একটা জিনিস আপনি কমন পাবেন। সেটা হলো, পরিবারের সম্মান মানুষের জীবনের চেয়েও বড় ছিলো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ নিজের ব্যর্থতার জন্য মরে যায় না, নিজের ভুলের জন্য মরে যায় না। মানুষ মরে যায় ব্যর্থতার পর প্রিয়জনদের কাছে পাবে না জেনে।
অথচ চাইলেই আমাদের পরিবার আমাদের জীবনকে সহজ করে দিতে পারে অনেকখানি। বলতে পারতো, যত বড় ভুলই হোক, ফিরে আসার পথ বন্ধ না। তোমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে? তুমি বাসায় ফিরে আসো। তোমার বৌ বা স্বামী তোমারে ভালোবাসে নাই? আমরা তো আছি, আমরা তোমারে ভালোবাসবো। ঠিক ভুলের হিসাব পরে হবে, আপাতত ঘরে এসে দুইটা খাও, দুইদিন ঘুমাও। তারপর যা হয় দেখা যাবে।
এই কথাগুলো বলেই দেখতেন, এই দেশের ৯০% আত্মহত্যা বন্ধ হয়ে যেতো। দেখতেন, ঐ মেয়েটার মতো লাখ লাখ ছেলে মেয়েকে জীবন্ত জাহান্নাম বুকে বয়ে বেড়াতে হতো না। অনেক অপরাধের বিচার হতো। ভিকটিম না, অপরাধীর পরিবার তটস্থ থাকতো সম্মানের ভয়ে।
কিন্তু না। আমরা আমাদের সন্তানদের, আমাদের ভাইদের, আমাদের বোনদের কোরবানি দিব, তাও ব্ল্যাকমেইলের কথা কাউকে জানাবো না, পাছে পরিবারের সম্মান চলে যায়?
আশ্চর্য আমাদের এই সম্মানের ইগো, আমাদের পরিবারের খানদানি ইমেজ। খোদা মানুষরে বললো- বান্দারে, তুই উহুদ পরিমাণ পাপ করে আমার কাছে ফিরে আয়, আমি তোরে ক্ষমা করে দেবো। কতই বা আর পাপ করছিস? তোর পাপ তো আর আমার ক্ষমার চেয়ে বেশি না? তুই ফিরে আয় বলে খোদা আমাদের জন্য তার দরজা খুলে দিলেন।
আর আমাদের পরিবার সম্মান, সমাজ আর ইমেজের কথা বলে আমাদের ফেরার পথ বন্ধ করে দিলো। অপরাধ তো দূরের কথা, এমনকি অপরাধের স্বীকার হলেও আমাদের জন্য ঘরে ফেরা কঠিন, কাউকে বলাও কঠিন। খোদার আদালত আমাদের মুক্তি দিলেও পরিবারের আদালত আমাদের কথা শোনার আগেই যাবজ্জীবন রায় দিয়ে রাখলো।
বিপদে পড়লে তাই বহু মানুষ চাইলেও পরিবারের কাছে ফিরতে পারে না। কোন ভুল করলে তাই আমরা খোদার কাছে চলে যাওয়াটারেই বেশি প্রেফার করি, পরিবারের বন্ধ দরজা আমাদের আর ঘরে ফিরতে দেয় না।