উগান্ডার ঐতিহাসিক জয়
চার্লস আমিনির লেগ স্টাম্পের ডেলিভারি প্যাডেল সুইপ করলেন কেনেথ ওয়াইসওয়া। ফাইন লেগের ফিল্ডারকে পাশ কাটিয়ে যেতেই উল্লাসে মাতলেন দুই ব্যাটসম্যান। ডাগআউটেও তখন আনন্দের জোয়ার। তা হবেই না কেন! ইতিহাসগড়া এক জয়ই যে নিশ্চিত করলেন ওয়াইসওয়া ও ব্রায়ান মাসাবা।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামের স্পিন সহায়ক উইকেটে পাপুয়া নিউ গিনিকে ৩ উইকেটে হারাল উগান্ডা। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই প্রথম জয়ের দেখা পেল তারা।
‘সি’ গ্রুপের ম্যাচে বৃহস্পতিবার আগে ব্যাট করে ৭৭ রানে গুটিয়ে যায় পাপুয়া নিউ গিনি। রান তাড়ায় একপর্যায়ে ২৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে উগান্ডা। পরে দেখেশুনে খেলে ১০ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নেয় মাসাবার নেতৃত্বাধীন দল।
ষষ্ঠ উইকেটে মহাগুরুত্বপূর্ণ ৩৫ রানের জুটি গড়েন সহ-অধিনায়ক রিয়াজাত আলি শাহ ও জুমা মিয়াজি। রান আউটে এই জুটি ভাঙার পর দলকে আরও কাছে নিয়ে যান রিয়াজাত। জয়ের খুব কাছে গিয়ে তিনিও ফিরলে ওয়াইসওয়াকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন মাসাবা।
চাপ সামলে ৫৬ বলে ৩৩ রান করেন রিয়াজাত। স্ট্রাইক রেট ৫৮.৯২। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অন্তত ৩০ রান করা কিংবা ৪০ বল খেলা সবচেয়ে ধীর ইনিংস এটি। তাতে অবশ্য রিয়াজাত বা উগান্ডার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ঐতিহাসিক জয়ের বড় কারিগর যে তিনিই। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন রিয়াজাত।
আর বল হাতে বড় অবদান রাখেন ৪৩ বছর বয়সী ফ্রাঙ্ক সুবুগা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার ৪ ওভারে দুই মেডেনসহ মাত্র ৪ রানে নেন ২ উইকেট। বিশ্বকাপের ম্যাচে কোটা পূর্ণ করা বোলারদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিং।
রান তাড়ায় উগান্ডার শুরুটা ছিল শঙ্কা জাগানিয়া। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই রজার মুসাকাকে এলবিডব্লিউ করেন অ্যালেই নাও। পরের ওভারে রবিনসন ওবুয়াকে ফেরান নরমান ভানুয়া। সাইমন সেসাজিও টিকতে না পারলে ৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে উগান্ডা।
চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন রিয়াজাত ও আলপেশ রামজানি। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ফেরেন ৮ রান করা রামজানি। পরের ওভারে দিনেশ নাকরানিও ধরেন ড্রেসিং রুমের পথ।
২৬ রানে ৫ উইকেট হারানো উগান্ডার বিপদ আরও বাড়তে পারত নবম ওভারে। চ্যাড সোপেরের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রিয়াজাতের ক্যাচ ছেড়ে দেন আমিনি। তখন ২৫ বলে ৮ রানে খেলছিলেন রিয়াজাত।
জীবন পাওয়ার পর আর ভুল করেননি ২৬ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। রানের চাপ তেমন না থাকায় মিয়াজির সঙ্গে রয়ে-সয়ে খেলতে থাকেন তিনি। সব মিলিয়ে ৫৬ বলের ইনিংসে মারেন মাত্র ১টি চার।
চতুর্দশ ওভারে ভাঙে মিয়াজি রান আউট হলে ভাঙে ৪৩ বলে ৩৫ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি। পরে ওয়াইসওয়াকে নিয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে যান রিয়াজাত। জয় থেকে ৩ রান দূরে থাকতে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি।
এর আগে টস জিতে পাপুয়া নিউ গিনিকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় উগান্ডা। প্রথম ওভারেই অধিনায়ক আসাদ ভালাকে ফেরান রামজানি। এক ওভার পর একই পথ ধরেন তিন নম্বরে নামা সেসে বাউ।
শুরুর ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি পাপুয়া নিউ গিনি। নিয়মিত উইকেট হারিয়ে ৮০ রানের আগেই থেমে যায় তাদের ইনিংস। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৫ রান করেন হিরি। এছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন শুধু লেগা সিয়াকা ও কিপলিন ডোরিগা।
সুবুগা ছাড়াও উগান্ডার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন রামজানি, মিয়াজি ও কসমাস কিয়ুটা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাপুয়া নিউ গিনি: ১৯.১ ওভারে ৭৭ (আসাদ ০, টনি ১, বাউ ৫, সিয়াকা ১২, হিরি ১৫, আমিনি ৫, ডোরিগা ১২, সোপের ৪, ভানুয়া ৫, নাও ৫, কারিকো ০*; রামজানি ৪-১-১৭-২, কিয়ুটা ৩.১-০-১৭-২, মিয়াজি ৪-০-১০-২, মাসাবা ৪-০-১৭-১, সুবুগা ৪-২-৪-২)
উগান্ডা: ১৮.২ ওভারে ৭৮/৭ (মুসাকা ০, সেসাজি ১, ওবুয়া ১, রিয়াজাত ৩৩, রামজানি ৮, নাকরানি ০, মিয়াজি ১৩, ওয়াইসওয়া ৭*, মাসাবা ০*; নাও ৪-০-১৬-২, ভানুয়া ৪-০-১৯-২, সোপের ৪-০-১৩-১, আসাদ ২-০-১০-১, কারিকো ৪-০-১৮-০, আমিনি ০.২-০-২-০)
ফল: উগান্ডা ৩ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রিয়াজাত আলি শাহ
Top Keyword: উগান্ডার ঐতিহাসিক জয়