প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের উন্নয়নের ‘গুণকীর্তন’ করে সঙ্গীত পরিবেশনের অভিযোগে পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে

যশোরে কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের উন্নয়নের ‘গুণকীর্তন’ করে সঙ্গীত পরিবেশনের অভিযোগে পাঁচজনকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।

শুক্রবার সকালে যশোর জিমনেশিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। পরে প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের উপস্থিতিতে সাত ঘণ্টা পর থানা থেকে মুচলেকা নিয়ে ওই পাঁচজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী

থানা হেফাজতে নেওয়া পাঁচজন হলেন- বাংলাদেশ কারাতে অর্গানাইজেশনের সভাপতি হুমায়ন কবির, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, যশোর জয়তি সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সংগঠন রওশন আরা রাসু ও বাংলাদেশ সোতোকান কারাতে দো অ্যাসোসিয়েশন (কিউখাই) খুলনা বিভাগের সদস্যসচিব স্থানীয় দৈনিক স্পন্দনের ফটো সাংবাদিক ইমরান হাসান টুটুল।

তাদের মধ্যে অর্চনা বিশ্বাস ২০২১ সালে রোকেয়া পদকে ভুষিত হন।

আয়োজক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার যশোর জিমনেশিয়ামে পঞ্চম আন্তর্জাতিক কারাতে চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে বাংলাদেশ কারাতে অর্গানাইজেশন। সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জয়তি সোসাইটি। চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার টিম অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।

জেলা প্রশাসক বলেন, “উদ্বোধনের পর খেলা শুরুর আগে নাচের সঙ্গে সাউন্ডবক্সে থিম সং বাজানো হচ্ছিলো। গানে বর্তমান সরকার ব্যবস্থার বিপরীতে যায় এমন একটা নাম উচ্চারণ করা হয়।

“আমার কাছে মনে হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করতে এই ঘটনা ঘটানো হতে পারে। তাই সঙ্গে সঙ্গে পাঁচজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করবে- আসলে তাদের কী লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিলো।”

বাংলাদেশ কারাতে অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “উদ্বোধনের সময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যশোরের থিম সং হিসেবে পরিচিত ‘খেজুর গুড়ের ফুলের মেলা, নকশিকাঁথার যশোর জেলা’- গানটির সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড় যশোরের শিশুশিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করছিল। গত সরকারের সময় রচিত গানটিতে তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা রয়েছে। তাতে শেখ হাসিনা আইটি পার্কের কথা রয়েছে।

“শেখ হাসিনা নামটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ সময় আমরা ভুল বুঝতে পেরে বারবার দুঃখ প্রকাশ করি। কিন্তু জেলা প্রশাসক পুলিশকে নির্দেশ দেন আমাদের থানায় নেওয়ার জন্য। এরপরা বেলা ১টার দিকে আমাদের থানায় আনা হয়।”

শেকড় যশোরের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু বলেন, “কারাতে প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। আয়োজকরা বলেন, যশোরের ব্র্যান্ডিং থিম-সংয়ের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনের জন্য। আমি সেই অনুযায়ী আমার সংগঠনের শিশুশিল্পীদের দিয়ে নৃত্য পরিবেশন করাই। কিন্তু বিষয়টি এমন হবে বুঝতে পারিনি।”

আলোকচিত্র সাংবাদিক ইমরান হাসান টুটুল রাতে বলেন, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনের উপস্থিতিতে রাত ৮টার দিকে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, “জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। এখনও অভিযোগ ও মামলা দেয়নি কেউ। ডিসি স্যার সিদ্ধান্ত না দিলে পরবর্তী আইনাননুগ পদক্ষেপে যাওয়া যাচ্ছে না।”

রাতে প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন বলেন, জেলা প্রশাসককে বুঝানো গেছে তারা নিরপরাধভাবে এই ভুলটা করেছেন। এরপর তার নির্দেশে মুচলেকা নিয়ে তাদেরকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *