পেনশন স্কীমে একমাসে কতজন কতটাকা দিলেন?

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর ১ মাস হচ্ছে রবিবার (১৭ আগস্ট)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গত ১৭ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতো সর্বজনীন পেনশন স্কিম শুরু করেন। শুরুর পর প্রথম মাসে ১২ হাজার ৯৭২ জন এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এ সময়ে টাকা জমা পড়েছে ৭ কোটি ৬৭ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা।

পেনশন স্কীম

গত ১৭ আগস্ট পেনশন স্কিম চালুর উদ্বোধনের পরপরই এতে অনেক সাড়া পড়ে বলে জানায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এ স্কিমের আওতায় সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ কারও বয়স ১৮ বছরের বেশি হলেই এখন অনলাইনে এই স্কিমে নিবন্ধন করতে পারছেন।

এদিকে দেশের নাগরিকদের পেনশন স্কিমে যুক্ত করতে সরকারের তরফ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চালানো হচ্ছে প্রচার-প্রচারণা। গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) শেষ হওয়া সংসদের ২৪তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে এ স্কিমে যুক্ত হতে আহ্বান জানান। ওই অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে সরকারপ্রধান সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে এ স্কিমে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে এমপিদের পরামর্শ দেন।

পেনশন স্কিমের অর্থ সরকার কোন খাতে বিনিয়োগ করবে—এটা স্পষ্ট না করলেও শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এই স্কিম থেকে যদি ভালো পরিমাণ টাকা ওঠে, তাহলে আমরা এখান থেকে ঋণ করতে পারবো উন্নয়ন খাতের জন্য।’

এক মাসে পেনশন স্কিমের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, এক মাস কিন্তু খুব বেশি সময় না। আমরা সব শ্রেণির মানুষকে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে গ্রামের জনগণ ও প্রবাসীদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছি।

রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সরকারের অতিরিক্তি সচিব গোলাম মোস্তফা বলেছেন, এখন পর্যন্ত পেনশন স্কিমের আওতায় এসেছেন ১২ হাজার ৯৭২ জন। এ সময়ে মোট টাকা জমা পড়েছে সাত কোটি ৬৭ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা।

এই সংখ্যক অর্থ প্রদানের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হলেও নিবন্ধনকারীর সংখ্যা আরও বেশি বলে জানান তিনি।

আগ্রহ বেশি প্রগতিতে:

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এখন আছে মোট চারটি ধরন—প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা। একেক স্কিম একেক শ্রেণিকে লক্ষ্য করে তৈরি, তাই চাঁদার পরিমাণও আলাদা। জানা গেছে, এর মধ্যে প্রগতি স্কিমেই সবচেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট চালু হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রগতির অ্যাকাউন্ট সংখ্যা মোট অ্যাকাউন্টের প্রায় অর্ধেক।

যেভাবে স্কিম খুলবেন

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব শ্রেণি ও পেশার বাংলাদেশি নাগরিক এই স্কিমে অংশ নিতে পারবে। অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিমের অংশীদার হতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক। তবে প্রবাসী বাংলাদেশি, যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা চাইলে পাসপোর্ট দিয়েও নিবন্ধন করতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে তার কপি জমা দিতে হবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের জন্য upension.gov.bd ওয়েবসাইটে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল দিয়ে কয়েকটি ধাপে নিবন্ধন করতে হবে।

এ সময় ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দরকার হবে। কেউ চাইলে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে নমিনি করতে পারবেন।

মাসিক চাঁদা ছাড়াও কেউ চাইলে তিন মাস পরপর বা বছরে একবার পুরো চাঁদা দিয়ে দিতে পারবেন।

নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে তার পরের এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা পরিশোধ করা যাবে। এরপর থেকে প্রতিদিনের জন্য এক শতাংশ বিলম্ব ফি যুক্ত হবে। কেউ টানা তিন কিস্তি পরিশোধ না করলে তার অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি নিজেকে অসচ্ছল ঘোষণা করেন, তাহলে ১২ মাস পর্যন্ত চাঁদা না দিলেও অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হবে না।

অনলাইন এবং যেকোনও মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে চাঁদা পরিশোধ করা যাবে।

আপাতত শুধু সোনালী ব্যাংকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের হিসাব খোলা হয়েছে। কেউ চাইলে সরাসরি সোনালী ব্যাংকে গিয়েও নিবন্ধন করতে ও চাঁদা দিতে পারবেন।

যাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে তারাও সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তিনি পেনশন পাবেন টানা ১০ বছর চাঁদা দিয়ে যাওয়ার পর।

অর্থাৎ স্কিম অনুযায়ী, ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হলেই তিনি সরকার থেকে পেনশন পেতে শুরু করবেন, তাকে আর চাঁদা দিতে হবে না। কিন্তু কেউ যদি ৫২ বছর বয়সে এসে স্কিমে অংশ নেন, তাহলে ৬২ বছর বয়স থেকে তিনি পেনশন পেতে শুরু করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *