কানাডাগামী ৪২ যাত্রীকে আটকে দিয়েছে বিমান সিলেটে তোলপাড়

কানাডা

একসময় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকলেও সিলেটের লোকজন এখন ঝুঁকেছেন কানাডার দিকে। গত কয়েক মাসে সিলেটের বিভিন্ন পেশার কয়েক হাজার মানুষ পেয়েছেন কানাডার ভ্রমণ ভিসা। অনেকে ভ্রমণ ভিসায় সেখানে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনও করছেন। তবে কানাডা যাওয়ার এই রঙিন স্বপ্ন বিবর্ণ হয়ে গেছে সম্প্রতি ৪২ যাত্রীকে ইমিগ্রেশনের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস আটকে দেওয়ায়। বিমানের দাবি, ওই যাত্রীরা ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দিয়ে ভিসা করিয়েছেন, তাই তাদের যেতে দেওয়া হয়নি। তবে সচেতন মহলের অভিযোগ, ভিসা ও কাগজপত্র যাচাইয়ের দায়িত্ব দুই দেশের ইমিগ্রেশনের। ৪২ জন যাত্রীকে আটকে দিয়ে বিমান শুধু বাড়াবাড়িই করেনি, বরং বাংলাদেশিদের জন্য কানাডার ভ্রমণ ভিসা প্রাপ্তি কঠিন করে তুলেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে বাংলাদেশিদের জন্য কানাডা সরকার ভ্রমণ ভিসা তুলনামূলক সহজ করে। এ সুযোগে সিলেটের লোকজন কানাডার দিকে ঝুঁকেন। কেউ নিজে আবেদন করে, আবার কেউ এজেন্সির সহায়তায় ভিসা পান। কিছু কিছু এজেন্সি ‘নো ভিসা, নো ফি’ চুক্তির মাধ্যমেও আবেদনের সুযোগ দেওয়ায় সাধারণ লোকজনও ঝুঁকেন। এজেন্সিগুলো কানাডা থেকে আমন্ত্রণপত্র সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করে। ভিসা হলে চুক্তি অনুযায়ী টাকা নেয়। এজেন্সিগুলো এরকম চুক্তির মাধ্যমে ৮ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এভাবে একটি এজেন্সির মাধ্যমে সিলেটের প্রায় ১০০ আবেদনকারী কানাডার ভিসা পান। আবেদনের সময় তাদের কানাডার একটি বিয়ের আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়। ওই বিয়েতে অংশ নেওয়ার জন্য তারা কানাডায় যেতে চান বলে ভিসা আবেদন করা হয়। সৌভাগ্যক্রমে ওই এক বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে প্রায় ১০০ ব্যক্তি ভিসা পান। গত ৬ নভেম্বর সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৪২ জন যাত্রী কানাডার উদ্দেশে রওনা হন। ওসমানী বিমানবন্দরে তাদের যথারীতি ইমিগ্রেশনও হয়। সিলেট থেকে কানেকটিং ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দরে যান। পরে তারা টরন্টোগামী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় বাংলাদেশ বিমানের পাসপোর্ট চেকিং ইউনিটের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের পাসপোর্ট দেখতে চান। তারা কেন কানাডা যাচ্ছেন জানতে চাইলে যাত্রীরা জানান বিয়েতে অংশ নিতে যাচ্ছেন। সেখানে থাকার জন্য বাসা ভাড়ারও কাগজপত্র দেখান যাত্রীরা। কিন্তু বিমানের কর্মকর্তারা ওই যাত্রীদের ‘সন্দেহজনক’ দাবি করে নির্ধারিত ফ্লাইটে যেতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। সংশ্লিষ্ট যাত্রীরা জানান, ওই সময় কর্মকর্তারা তাদের ভিসা সঠিক কি না তা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে পারবেন না বলে জানান। প্রয়োজনে তাদের বিমান কর্তৃপক্ষ হোটেলে রাখবে বলেও জানানো হয়। এরপর ভিসার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিমানের পক্ষ থেকে কানাডার সিঙ্গাপুর ও দিল্লির ভিসা অফিসে মেইল পাঠায়। কিন্তু পরদিন সকাল পর্যন্ত কোনো উত্তর না আসায় ওই ৪২ যাত্রীর ইমিগ্রেশনের সিল কেটে দিয়ে লাগেজসহ ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে ইমিগ্রেশনের পর বিমান কর্তৃপক্ষ ৪২ যাত্রীকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনাটি গত রবিবার ফাঁস হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ এজেন্সির মাধ্যমে চুক্তিতে কানাডার ভিসার বিষয়ে বিরোধিতা করেন। তবে বেশির ভাগ নেটিজেন প্রশ্ন তুলেছেন বিমানের এখতিয়ার নিয়ে। কী ধরনের কাগজ দিয়ে ভিসা করা হয়েছে সেটা যাচাইয়ের এখতিয়ার বিমানের রয়েছে কি না এ নিয়ে সিলেটজুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

ট্রাভেল এজেন্সি ও ভিসা কনসালট্যান্টরা বলছেন, ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দিয়ে ভিসা করার অভিযোগে বিমান ৪২ যাত্রীকে আটকে দেওয়ার ঘটনায় আগামীতে কানাডার ভ্রমণ ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা তৈরি হতে পারে। কমে যেতে পারে ভিসা প্রদানের হারও। এ প্রসঙ্গে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহা-ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *