২০১৯ সালের একটি রিপোর্ট বলছে– “‘সৃজনশীল প্রশ্নপত্র’ নিয়ে দেশের মাধ্যমিক স্তরে এখনও হযবরল অবস্থা। ভালোভাবে শিক্ষক প্রশিক্ষণ না দিয়েই একের পর এক বিষয়ে চালু করা এ প্রশ্ন পদ্ধতির কারণে একাধিক পাবলিক পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা হোঁচট খেয়েছে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের। সৃজনশীল প্রশ্নপত্র বিষয়ে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষকের সংকট সেখানে সবচেয়ে তীব্র। এসব অঞ্চলে বসবাসকারী অপেক্ষাকৃত দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বিষয়ে দক্ষ করে তোলার জন্য সরকারিভাবেও আলাদা কোনো উদ্যোগ নেই।
জানা গেছে, প্রায় একযুগ আগে সনাতনী পদ্ধতির পরিবর্তে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলেও এখন পর্যন্ত তা আয়ত্ত করতে পেরেছেন সারাদেশের মাত্র ৫৮ শতাংশ শিক্ষক। খোদ সরকারি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। জানুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওই সমীক্ষা চালায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সম্প্রতি এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। তবে বাস্তবে এ চিত্র আরও করুণ বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।
যশোর অঞ্চলের এক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সৃজনশীল বোঝে এবং প্রশ্ন করতে পারেন এমন শিক্ষকের সংখ্যা ২০ শতাংশের মতো। তিনি বলেন, আসলে শিক্ষকরাই ভালো করে বিষয়টি বোঝেন না। ছাত্ররা বুঝবে কীভাবে?”
তারপরেও সেই পূজনীয় সিস্টেম চলছে প্রবল প্রতাপের সাথে। যত দোষ নন্দ-ঘোষের মতো সব দোষ নতুন কারিকুলামের। ৮০ ভাগ অদক্ষ শিক্ষক নিয়ে পুরাতন কারিকুলাম চলতে পারলে নতুন কারিকুলাম কেন চলতে পারবে না তা বোধগম্য নয়।
নতুন কারিকুলাম গাইড ও কোচিংকে আরও মানসম্মত সম্মানজনক পর্যায়ে নিয়ে যাবে। ইংরেজির কথাই ধরি– নতুন কারিকুলাম অনুযায়ী কোচিং সেন্টারগুলি শেখাবে স্পিকিং, রিডিং, ফ্রিহ্যান্ড রাইটিং, প্রেজেন্টেশন স্কিল এবং এসবের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রামার। কারণ, মূল্যায়ন হচ্ছে এগুলির উপর ভিত্তি করেই। এগুলি যেসব টিউটর বা কোচিং সেন্টার শেখাতে পারবে না তারা ঝরে পড়বে। ফলে, মানসম্মত কোচিংসেন্টারগুলিই টিকে থাকবে। আর এসব যারা শেখাবে, সেসব কোচিং সেন্টারকে আর ছোটো করে দেখা যাবে না। বর্তমানের কোচিং সেন্টারগুলি কোনো স্কিল তৈরি করে না কারণ, কারিকুলামেই স্কিল নাই। কিছু মডেল প্রশ্ন গিলে খেয়ে তিন ঘন্টা পরীক্ষা দিয়েই ইংরেজিতে এ প্লাস পাওয়া যায়। অথচ ইংরেজিতে নিজে থেকে কিছু বলতে বা লিখতে পারে না। প্রেজেন্টেশন স্কিলের করুণ দশা। সবার সামনে গিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলতে পারে না দেশের নব্বই ভাগ শিক্ষার্থী। নতুন কারিকুলামে সেই জড়তা কম-বেশি সবারই ভেঙ্গে যাবে। যে যত বেশি জড়তা ভাঙ্গতে পারবে, সে ততো যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে পরিগণিত হবে। এভাবেই তৈরি হবে আগামীর যোগ্য প্রজন্ম। বাই প্রোডাক্ট হিসেবে IELTS প্রস্তুতিও হয়ে যাবে ডাল-ভাত।
২০২৪ সাল থেকে নতুন কারিকুলামের অংশ হিসেবে ৮ম এবং ৯ম শ্রেণিতে Python Programming Language অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যা বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ। সুতরাং, আমাদের কারিকুলাম শুধু রান্না শেখাচ্ছে, আর অন্যদেশে সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং– এটা সত্যি নয়।
Muntasir Mamun এর ফেইসবুক পাতা থেকে –